উত্তরাঞ্চলের মতো যানজট হতে পারে দক্ষিণাঞ্চলে 06/07/2022

 সাক্ষাৎকার


ঈদের ছুটি সংক্ষিপ্ত হওয়ায় এবার যানজট ও ভোগান্তির শঙ্কা আছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এবার উত্তরাঞ্চলের মতো দক্ষিণাঞ্চলেও যানজট হতে পারে। এসব বিষয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক হাদিউজ্জামান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাদ্দাম হোসাইন।

উত্তরাঞ্চলের মতো যানজট হতে পারে দক্ষিণাঞ্চলে

06/07/2022

 



প্রথম আলো গত ঈদযাত্রায় ব্যাপক যানজট ও ভোগান্তির শঙ্কা করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। তবে ভালোয় ভালোয় ঘরমুখী মানুষ বাড়ি ফিরেছেন। এবারের ঈদযাত্রা কেমন হতে পারে?


হাদিউজ্জামান গতবারের ঈদযাত্রায় যানজটের আশঙ্কার পাশাপাশি বলা হয়েছিল, মানুষ ধাপে ধাপে ঢাকা ছাড়লে এবং পরিবারের সদস্যদের আগেই গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিলে ভোগান্তি কম হবে—তা–ই হয়েছে। এটি সম্ভব হয়েছে ঈদে দীর্ঘ ছুটির কারণে। এবার সেই সুযোগ নেই, এবার ছুটি সংক্ষিপ্ত। তাই এবার যানজট হতে পারে। তবে এবার যে পরিবর্তনটি হবে, তা হচ্ছে, উত্তরবঙ্গে আমরা আগে যেমন যানজট ও ভোগান্তি দেখেছি, এবার দক্ষিণ ও দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলে যাওয়ার পথে সে রকম যানজট হতে পারে। এর মূল কারণ পদ্মা সেতু চালু হওয়া। পদ্মা সেতুর আকর্ষণে এবার অনেকেই এই পথে বাড়ি যাবেন। ফলে দক্ষিণবঙ্গকেন্দ্রিক যানজট তীব্র হতে পারে।


প্রথম আলো ইতিমধ্যেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়কের (ঢাকা–মাওয়া–ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে) টোল প্লাজায় যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা যাচ্ছে। ঈদযাত্রায় এটি কি আরও দীর্ঘ হবে?


হাদিউজ্জামান ঈদের ছুটি সংক্ষিপ্ত হওয়ায় (শুক্র ও শনিবার) স্বাভাবিকভাবেই আশঙ্কা করা হচ্ছে, টোল প্লাজাকেন্দ্রিক যানজট হবে। কিন্তু এটি হবে খুব দুঃখজনক। এই এক্সপ্রেসওয়ে ২০২০ সালের মার্চে উদ্বোধন করা হয়েছে, আর টোল নেওয়া শুরু হয়েছে ১ জুলাই থেকে। অর্থাৎ হাতে প্রায় দুই বছর সময় ছিল। কিন্তু এই সময় কাজে লাগানো হয়নি, টোল প্লাজার ডিজিটালাইজেশন করা হয়নি। এ ক্ষেত্রে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রস্তুতির ঘাটতি আছে। বিজ্ঞান বলে, সনাতনী পদ্ধতি থেকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে গেলে টোল সংগ্রহের সক্ষমতা পাঁচ গুণ বাড়ত, ফলে যানবাহনের সারিও ছোট হয়ে আসত।


প্রথম আলো বর্তমান বাস্তবতায় কী করলে টোল প্লাজার ভোগান্তি কমানো যাবে?


হাদিউজ্জামান ‘ইলেকট্রনিক টোল কালেক্টিং সিস্টেমে’ যাওয়া স্থায়ী সমাধান। আপাতসমাধান হলো ব্যবস্থাপনায় জোর দেওয়া। এ ক্ষেত্রে দুটি কাজ করা যেতে পারে। প্রথমত, ১২টি টোল প্লাজার মধ্যে ঢাকা ছেড়ে যাওয়া যানবাহনের জন্য ৯–১০টি এবং বাকিগুলো ঢাকায় ঢোকা যানবাহনের জন্য চালু রাখা যেতে পারে। এতে কম সময়ে ঢাকা থেকে যানবাহন দক্ষিণ বা দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলে যেতে পারবে। দ্বিতীয়ত, টোল প্লাজায় ভাংতি টাকার ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করতে হবে। এ জন্য প্রচারণার মাধ্যমে জনসাধারণকে সচেতন করতে হবে, তাঁর গাড়ি নিয়ে এক্সপ্রেসওয়ে পার হতে ঠিক কত টাকা লাগবে।


প্রথম আলো ঈদযাত্রায় বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতুর দুই পাশেও দীর্ঘ যানজট দেখা যায়। এর মূল কারণ ও সমাধান কী?


হাদিউজ্জামান ঢাকা থেকে যাওয়ার পথে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত চার লেনের মহাসড়ক, কিন্তু এরপর থেকে দুই লেনের সড়ক। মূলত এই দুই লেনের সড়কের কারণেই যানজট হয়, এবারও সেটি হতে পারে। এই ভোগান্তি কমাতে পশুবাহী ট্রাক চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পাশাপাশি দুই লেনের সড়কে অস্থায়ী ডিভাইডার বসিয়ে দিতে হবে, যাতে ওভারটেক করতে গিয়ে এক দিক থেকে পুরো সড়কের যান চলাচল বন্ধ না হয়।


প্রথম আলো ঈদের ঠিক আগমুহূর্তে মহাসড়ক সংস্কার যানজটের একটি কারণ বলে মনে করা হয়। ঈদের এক–দেড় মাস আগে কেন এই সংস্কার করা হয় না?


হাদিউজ্জামান সংস্কারগুলো হয় অস্থায়ী। এই অস্থায়ী মেরামত টেকে ১০ দিনের মতো। তাই ঈদের এক–দেড় মাস আগে সংস্কার করলে সেটি ঈদে কাজে না–ও আসতে পারে। কিন্তু সড়কের স্থায়ী সমাধান করতে হবে।


প্রথম আলো এবার দক্ষিণ ও দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলকেন্দ্রিক যানজটের যে আশঙ্কা করা হচ্ছে, কীভাবে তা সহনীয় করা যায়?


হাদিউজ্জামান পাটুরিয়া–দৌলতদিয়া ঘাটকে কাজে লাগতে হবে, প্রয়োজনে মাওয়া থেকে ফেরি নিয়ে সেখানে দিতে হবে। পাশাপাশি পদ্মা সেতু হয়ে যানবাহন পার হতে কত সময় লাগছে, সড়কের পরিস্থিতি কী, তা তাৎক্ষণিকভাবে জনসাধারণকে জানাতে হবে। এ জন্য পোস্তগোলায় একটি ‘ইনফরমেশন বোর্ড’ চালু করা যেতে পারে। যাতে রাস্তার পরিস্থিতি খারাপ হলে মানুষ গাড়ি ঘুরিয়ে পাটুরিয়া–দৌলতদিয়া দিয়ে যেতে পারে।

Post a Comment

Previous Post Next Post