মো. হাদিউজ্জামান

সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিতে (পিপিপি) বাস্তবায়ন করা বড় প্রকল্পের মূল সৌন্দর্য হচ্ছে এর নিরাপত্তায়। কিন্তু মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে সেটা নেই। এখানে অতি মুনাফার লোভে সব ধরনের গাড়ি চলার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। আনফিট, ঝুঁকিপূর্ণ গাড়ি এই উড়াল সড়কের নিরাপত্তাকে আরো ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
পাশাপাশি সিটি করপোরেশন ইচ্ছা করে নিচের সড়ক অকার্যকর করে রেখেছে, যাতে ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে গাড়ি চলাচল বাড়ে। নিচের সড়ক সচল না পেলে ফ্লাইওভার দিয়ে ফিট, আনফিট, অবৈধ—সব ধরনের গাড়ি চলাচলে বাধ্য করা হয়েছে। এতে ঝুঁকি তৈরি হবে—এটাই স্বাভাবিক।
সিটি সার্ভিসের বাসও ফ্লাইওভারে উঠতে বাধ্য হচ্ছে।
পিপিপি প্রকল্পের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে এটা কখনোই যায় না। এমন প্রকল্পের উদ্দেশ্য থাকা উচিত নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া। কিন্তু শুরু থেকে লাভের লোভে দিনের পর দিন এই সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রকল্পের উদ্দেশ্য হয়ে গেছে টোল কালেকশন।
আরেকটি বিষয় নজরে আনা দরকার।
মাত্র সাড়ে ১১ কিলোমিটারের একটা ছোট্ট সড়কে ১০ বছরে এক হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু অত্যন্ত অস্বাভাবিক। অথচ এটি আধুনিক অবকাঠামো। এখানে ব্যবস্থাপনার ঘাটতি প্রকাশ্য। এখন তো আন্ত জেলার বাসগুলোও এতে উঠছে। সিটি করপোরেশন কোনো বাধা দিতে পারছে না।
আমাদের ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কগুলো বড় করছি। ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের মতো অত্যাধুনিক সড়ক ঢাকার মধ্যে মিশে যাচ্ছে। এতে যেটা হয়েছে, সেটা হলো হানিফ ফ্লাইওভার কোনো না কোনোভাবে জাতীয় করিডরের অংশ হয়ে যাচ্ছে।
দেখুন, নদীতে যান যখন ফেরি দিয়ে পার হয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই নির্দিষ্ট সংখ্যক গাড়ি একসঙ্গে যাতায়াত করে। কিন্তু আমাদের সড়ক ব্যবস্থায় একসঙ্গে গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে চাপ কমানোর কোনো পদ্ধতি নেই। ফলে ফিল্টার করা যাচ্ছে না। যানবাহনের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি দ্রুতগতিতে সবাই একসঙ্গে চলে যেতে চাইছে।
এমন পরিস্থিতিতে ফ্লাইওভারের নিচের সড়ক কার্যকর করা গেলে ওপরের সড়ক থেকে চাপ কমানো যেত। এখানে সিটি করপোরেশনের দায় রয়েছে। বাস মালিকরাও শুধু ব্যবসা দেখছেন, সেবা দিতে চাইছেন না। যাঁরা দ্রুতগতিতে সড়ক দিয়ে চলে যেতে চাইছেন, তাঁদেরও মানসিকতা পরিবর্তনের আহ্বান জানাব।
লেখক: সাবেক পরিচালক, দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট, বুয়েট
Post a Comment